03/16/2025 জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো ছাত্রজীবনে প্রেম - শেষ খন্ড
জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো ছাত্রজীবনে প্রেম - শেষ খন্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক
৭ মে ২০২১ ০৩:৫৩
মোঃ শাহ্ জালাল।।
হঠাৎ শিমু বললো এই হ্যালো কি ভাবছেন, আজ আমি আপনাকে একটা জিনিস গিপ্ট করবো নিবেন। আমি বললাম কি গিপ্ট? শিমু বললো ঠিক ১১টায় এমএম কলেজের কলা ভবনের সাদে আসবেন। আমিও ভাবলাম তাহলে তো ভালোই হলো, আমি ঠিক ওখানে মনের কথাটা বলে দিব। কোন মতে মাস্টার্সে একটা ক্লাস করে চলে গেলাম ১১টা বাজার আগেই কলা ভবনের সাদে। দেখি আমার আগেই শিমু যেয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাদের নির্জন এক কোনে। জনশূন্য সাদে খানিকটা ভয়ও করছিলো কেউ যদি মাইন্ড করে বসে। শিমু আমার কাছে এগিয়ে এলো এবং বললো জানো আমার ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা শেষ। মাস্টার্স ভর্তী হবো কিন্তু বাবা - মা বলছে ইন্ডিয়া যেয়ে ভর্তী হতে। আমি রাজি না। আর তাছাড়া আমি চিরদিনের জন্য বাংলাদেশে থেকে যেতে চাই। কিন্তু আত্মীয় স্বজনহীন এই দেশে কিভাবে থাকব? তাই এইসব ভেবে আজ কয়েক দিন রাতে ঘুম আসেনা। অনেক করে ভেবেছি, এই কয়দিনে অনেক রাতও কেঁদেছি। পরিশেষে এটাই বুঝলাম বলে শিমু আমার আরো কাছে এসে ঠিক নাকে কাছে নাক নিয়ে ঠোঁটে কাছে ঠোঁট নিয়ে আলতোভাবে মাথাটা টেনে ধরে কপালে একটা টোকা দিয়ে
বললো জানো জীবনে যা কাউকে দিনি আজ তোমাকে দিলাম বলে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। এবং বললো আমি অনেক করে ভেবেছি কিন্তু তোমার মতো করে আমাকে কেউ ভালোবাসতে পারবে বিশ্বাস হয়না। এই ৪টা বছরে আমি দেখেছি তুমি আমাকে যতটা খেয়াল করো অন্য কেউ আমাকে এই খেয়াল করবে বলে মনে হয় না। তাই আমি তোমাকে চাই, তোমাকে ভালোবাসি। তোমার কাছে সারাজীবন থাকতে চাই। আমিও বললাম আমিও তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু সাহস করে কখনো বলতে পারিনি। কারণ তুমি যে রাগী। প্রথম ফোন আলাপে আমাকে যে ঝাড়িটা দিয়েছিলে আজও তা মনে পড়লে ভয় করে তোমাকে আমার। শিমু বললো সর ভিতুর ডিম বলে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে একটা দৌড় দিল আমি পিছু পিছু দৌড়াতে লাগলাম।
তোমাকে আপন করে পাবার আশায়।
ব্যাকুলতায় ভরা শূন্য দৃষ্টিতে আমার
মন ভরেনা, তাই অপলক দৃষ্টিতে
আঁখি পানে নিজেকে খুঁজি বার বার।
তুমি আছো, তবুও মনে হয় তুমি নেই!
নির্বাক দৃষ্টিতে চেয়ে রই তোমার পানে,
অপলক ভাবনায় এ মন ডুবে যায়
আজ মাতাল হাওয়ায় আরো একবার।
তোমার ভালবাসার টানে বহু বছরের
চেনা পরিচিত সব দুরে ঠেলে নতুন এক
পৃথিবী গড়েছি তোমায় নিয়ে
যশোরের এই হাজার মানুষের ভিড়ে।
আজ কানায় কানায় পূর্ণ করে দিয়ে
ভালবাসার আদলে আগলে রেখেছি
তোমার ঐ বাহু ডোরে আমার
নতুন পৃথিবী জুড়ে শুধুই একটি শব্দ তুমি।
আমার এই নতুন পৃথিবী জুড়ে
শুধু তুমিই আমার শ্রেষ্ট পুরুষ ফয়সাল
আর আমি আজ তোমার একমাত্র
ভুবনের আকাশ জুড়ে লীজা।
কতটা সহজে গড়েছি মধুর স্বপ্নের ভুবন
আজকের এই একটি রাতের অপেক্ষায়
কত জোস্না ভরা রাত কাটিয়েছি করেছি
দুজনে পাশাপাশি নিবিড় আলিঙ্গন।
সারাজীবন থাকতে চাই কাছাকাছি
অন্তরের অন্তর থেকে দুজন দুজনার
নিরবে নিভৃতে খুব সঙ্গোপনে।
একান্ত আপন করে চিরদিন একসাথে।
আজ তোমার আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে
বার বার দৃষ্টিতে দৃষ্টি রেখে বলতে চাই
এতোদিন না বলতে পারা ভুলগুলো
ক্ষমা করে দিয়েছি আপন মনে।
শুরু হলো জীবনে চাওয়া ও পাওয়ার এক আত্মতৃপ্তির প্রেম তবে বড্ড অবেলায়। এরি মাঝে আমার মাস্টার্স শেষ। শিমু মাস্টার্সে ভর্তী হলো। এদিকে সেমিস্টার জটে মাস্টার্স শেষ করতে ২৮ বছর পেরিয়ে গেছে আমার। আগামী দুই বছরের মধ্যে চাকরি জোগাড় করতে হবে। বহু পড়াশোনা প্রয়োজন কিন্তু পড়া শুনা তেমন হচ্ছে না। জীবনের এই মধুময় সময় কিছু ভালো লাগেনা সবসময় ঘুরতে ভালো লাগে বেড়াতে ভালো লাগে। সকাল হলেই হারিয়ে যায় দু'জন দু'জনর হাত ধরে যশোর রেললাইনের পথ ধরে। কখনো বা যশোর এয়ারপোর্টের ক্যানটিনে, যশোর পৌর পার্ক, বিনোদিয়া, খুলনা গিলেতলা। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সারা শহর রিকশায় ঘোরাঘুরি করতাম। কেননা রিকশায় বসলে নিজের ইচ্ছার বাইরেও অতি কাছাকাছি বসাযায়। তখন আরো কতো আপন, কতো প্রিয় ও মধুর মনে হয় দু'জন দুজনকে।
এই মধুময় সময় কাটাতে কাটাতে আরো একটি বছর পার হয়ে গেল। বহু সরকারি চাকুরীর পরীক্ষা দিয়েছি কোন লাভ হচ্ছে না কেননা কোন পরীক্ষায় ফলাফল ভালো হচ্ছে না। ঔদিকে শিমুর মাস্টার্স শেষ। ইন্ডিয়া থেকে বাবা-মা তাগিদ দিচ্ছে দেশে চলে যেতে বলছে। শুরু হল কঠিন জীবন যুদ্ধো। কোন মতে ৬ মাস কাটানানোর পর শিমু বললো আমি আর এদেশে থাকতে পারছিনা তুমি আমাকে বিয়ে করো। বাবা- মা কে বলে দি আমি দেশে আসবো না।
তখন বেকার, সাহস পাচ্ছি কি দিয়ে কি করবো। শিমুকে বোঝাতে লাগলাম কয়টা দিন ধৈর্য ধরো একটা চাকরি পাই, তুমিও চাকরির পরীক্ষা শুরু করো। শুরু হলো দুজনের চাকরি যুদ্ধ কিন্তু মানসিক প্রেসারে দু'জনে কেউ চাকরির পরীক্ষায় পাস করতে পারছিলাম না। কেননা জীবনের কঠিন ও লাইফ গড়ার শ্রেষ্ঠ সময় হলো মাস্টার্স পরীক্ষা পর দুটি বছর আর সেই সময়ে চুটিয়ে প্রেম এরি মাঝে শিমুর দেশে ফেরা বিয়ে নানাবিধ মানসিক টেনশনে আমাকে অতিষ্ঠ করে তুললো। ওদিকে অনার্স, মাস্টার্সে ভালো রেজাল্ট না থাকায় বেসরকারী ভালো কোন কোম্পানি চাকরি দিচ্ছে না। তাই এখন কোন ঠিছুই আর ভালো লাগে না। কোন চাকরিও হলোনা বয়স ৩০ পেরিয়ে গেল সব আশা শেষ। শিমুর বাবা-মা আমাদের সম্পর্কের কথা জেনে গেল। কোন মতে আমার সাথে বিয়ে দিবে না শিমুকে। একদিকে বেকার ছেলে অন্য দিকে মুসলিম আমি। কেননা শিমুর মা- বাবা এখন দু'জনই ইন্ডিয়াতে হিন্দু ধর্মের অনুসারী যদিও তারা এখনও সকল আত্মীয় সজন থেকে বিচ্ছিন্ন তাই একই ঘটনা মেয়ে জীবনে আসুন তা চাই না শিমুর বাবা,- মা। ওদিকে শিমুর মা'য়ের চাই বিসিএস ক্যাডার জামাই। ফলে আশাহত হলাম আমরা। তবুও শিমুর ইচ্ছে আমার সাথে থাকার তাই শুরু হলো এবার যে কোন একটা বেসরকারি চাকরি খোঁজার পালা। সেদিন পড়ন্ত বিকালে মনিরামপুর থেকে যশোরের আসছিলাম চাকরির পরীক্ষা দিতে শিমু ও আমি একটি প্রাইভেট ফার্মে।
- হঠাৎ রাজারহাট রেলক্রসিং এর সামনে থেকে বাসটা বাম দিক ডানদিক করে খুব জোরে টলতে লাগলো,পিছন থেকে একটা লরি খুব জোরে বাসটা কে ধাক্কা মেরেছে ,ড্রাইভার কোনোভাবেই বাসের ব্যালান্স ঠিক রাখতে পারছেনা। সামনে থাকা আরো একটা বাসে গিয়ে খুব জোরে ধাক্কা মারলো আমাদের বাসটা। বাস ভর্তি লোকেরা সবাই নিজেদের জায়গা থেকে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেলো,জানলার কাঁচ ভেঙ্গে অনেকে রাস্তাতে গিয়ে পড়লো , শিমুর মাথাটা গিয়ে খুব জোরে সামনে গিয়ে টুকলো, আমি গিয়ে পড়লাম শিমুর গায়ে। শিমুর জন্য আমার মাথাটা বেঁচে গেলো, আমার সেরকম কিছু হলোনা। কিন্তু শিমু বাঁচলো না , অত্যধিক ব্লিডিং এর জন্য এই ঘটনার কিছু সময়ের মধ্যেই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল।
আসলে প্রিয় পাঠক কিছু কিছু ভালোবাসা হয় পাশাপাশি থাকা দুটি রেল লাইনের মতো। মাইল এর পর মাইল রেল লাইন দুটি একসাথে তো চলে কিন্তু কোনোদিন তারা এক হতে পারেনা। কোনোদিন তারা মিলে যেতে পারে না। কাল্পনিক এই চরিত্রের গল্পটা হয়তো সেরকমই এক রেল লাইন। যে রেল লাইন শেষ ৪ বছর ধরে আমরা একে অন্যেরে পাশে থেকে রেল লাইনের সাথে অনেকটা পথ একসাথে পাড়ি তো দিয়েছিলাম ,কিন্তু কোনোদিন সেই দুটি লাইনের উপর চলা কোনো ট্রেন এসে আমাদের মিলিয়ে দিতে পারেনি।
কেননা জীবনের কঠিন ও জীবন গড়ার শ্রেষ্ঠ দুটি বছর এসে শুরু হয়েছিল আমাদের প্রেম। এমন কি শিমুর মৃত্যুর আগে আমাদের ভালোবাসার কথাটা আমি বাবা- মাকে জানাতে পর্যন্ত পারিনি ! তবে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার আগেই শিমু তার জীবন দিয়ে ভালোবাসার মানুষটার জীবন রক্ষা করে গেলো। আর আমি এই কাল্পনিক গল্পের চরিত্রে বেঁচে থেকেও মৃত। না পারলাম স্মৃতি ভুলতে না আছে ভালো চাকরি।