নজরুল ইসলাম।।
সালটি হবে ১৯৮৩-৮৪ইং, আমি তখন তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। প্রান্তিক চাষি আমার আব্বা নিজেদের জমিতে লাগানো নানা ধরনের তরকারি (স্থানীয় মনিরামপুরের হেলাঞ্চী বাজারে,যা প্রতি রবি এবং বুধবার বসতো এবং এখনও বসে) নিয়ে যেতেন বিকেলে এবং সন্ধ্যা নাগাদ বেশি ভীড়ের সময় আব্বা একা সামলাতে পারতো না বলে আমাকে ও কিছুটা সহযোগী হিসাবে সাথে নিয়ে যেতেন। (যদিও আমার পড়াশোনার কিছুটা ক্ষতি হতো) ছালার চট(পাটের বস্তা) পেতে বেচা-বিক্রি হতো। আব্বার সাথে বাজারে যাওয়া ছিল বেশ লাভ জনক। খাবার(মিষ্টি) খাওয়ার জন্য টাকা পাওয়া যেতো। হাটের শেষ অব্ধি থাকাতে লাভ ছিল আরও বেশি, প্রায় দ্বিগুণ। আব্বার কাছ থেকে কিছুটা পয়সা বেশি পাওয়া যেতো, আবার কখনও কখনও এদিক সেদিক করে কিছু হতো, মানে .... আব্বাতো! কিছু দিন এভাবে যাওয়ার পর আমার ব্যবসা কিছুটা স্বতন্ত্র হয়ে গেল। আবার সাথে একই ছালার চটে আমার ডেউয়ার ব্যাবসা কিন্তু হিসাব নিকাশ আলাদা। আমার ডেউয়া বিক্রির টাকা সবই আমার, এখানে আব্বার কোন ভাগ নেই । বাবা-মায়ের ৫ মেয়ের পরে আমি প্রথম ছেলে সন্তান হওয়ায়(যদিও আমার আরও ভাই হওয়ায় সেই একক আধিপত্য বেশি দিন ছিল না ) বেশ আদরেই ছিলাম বটে। ৫বোনের আমি এক ভাই, সুতরাং বোনেদের ও যথেষ্ট আদরের ছিলাম বইকি। কোন ভাবেই আমাকে গাছে উঠতে দিতো না মা-বাবা, হয়তো পাছে কোন অনিষ্ট হয়ে যাবে এ ভয়ে। তাহলে ডেউয়া গাছ থেকে পাড়বে কে? ২৫-৩০টা ডেউয়া পাড়া হতো হাটে বিক্রির জন্য আর তা পাড়ার জন্য পাড়ায় কিছু ছেলে পাওয়া যেতো, যাদেরকে ডেউয়া পাড়ার বিনিময়ে ৩-৪টা দিলেই হতো। আমার মা, ডেওয়া পাড়া, বাড়ি নিয়ে আসা,বাড়িতে এনে বস্তা বা বেতের ধামার মধ্যে কিছু পাতা দিয়ে পাকানোর জন্য রেখে দেওয়া সর্বশেষ হাটবারে সে গুলো বের করে যাচাই-বাছাই করা(বেশি পেকে নষ্ট হলে বা সাইজে ছোট হলে তা আলাদা করা) বাজারে নিয়ে বিক্রি করার উপযুক্ত করা, সবকিছু সাথে থেকে করে দিতেন। তারপর আব্বা তার তরকারি ঝুঁড়িতে করে ছিঁকে-বাকে করে বাজারে নিয়ে দিতেন, আব্বার বোঝা বেশি হলে আমি আলাদা করে ছোট ঝুড়িতে করে সাজিয়ে মাথায় নিয়ে বাজারে গিয়ে বিক্রি করতাম। বেশ চাহিদা ছিল বাজারে। দাম ও বেশ ভালই, ১৫-২০( কুড়ি) পয়সা থেকে শুরু আট আনা, সবচেয়ে বড় সাইজের বারোয়ানা। যদিও বছর বছর দাম বেড়েছে বাজারে। আমিই একমাত্র ডেউয়ার ব্যাপারী সুতরাং বিক্রি করতে তেমন বেশি বেগ পেতে হতো না। হাতে বেশ পয়সা জমতে লাগলো। বেশ কয়েক বছর বিক্রি করেছি বলা যায়,নবম-দশম শ্রেণিতে উঠা পর্যন্ত। আজ অনেক গুলো বছর হলো সেই ডেউয়া গাছটি আর নেই। নেই সেই ডেউয়া গাছের মালিক;আমার আব্বাজানও। ১লা অক্টোবর ২০২০ইং তিনি আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তবে সান্ত্বনা সেই ডেউয়া গাছটির নীচেয় চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন তিনি। সাথে আরও আছে আমার ,ভাইঝি,দাদা-দাদীসহ আপনজনেরা(সেখানেই আমাদের পারিবারিক কবরস্থান)। আমার মমতাময়ী মা বেঁচে আছেন এখনো। হয়তো একদিন আমাদের ঠিকানা হবে সেই ডেউয়া গাছের তলায়। আমরাও............
সকলের কাছে দোয়া কামনায় সেই আমি, নজরুল ইসলাম। জীবন থেকে নেওয়া, আবেগ থেকে লেখা। ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।