03/16/2025 মণিরামপুরের এক সময়ের খরস্রোতা হরিহরনদ এখন মরা খাল
নিজস্ব প্রতিবেদক
৮ এপ্রিল ২০২১ ১২:৩৮
মণিরামপুরের এক সময়ের খরস্রোতা হরিহরনদ এখন মরা খাল। যশোরের মণিরামপুর ও কেশবপুর পৌর শহরের কোল ঘেষে বহমান এ নদীটির নাব্যতা হ্রাস পেয়ে কালক্রমে এটি এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। এককালের অতিপরিচিত মণিরামপুরে গাঙ হিসেবে খ্যাত এই নদীটির খর¯্রােতের গর্জনে মণিরামপুর পৌর শহরের রাজগঞ্জ সড়কের ব্রিজের কাছে নৌযান ভিড়তে হিমসিম খেয়েছে বলে পূর্বপুরুষ ও বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা যায়। যেটি এখন সেকেলে গল্প ও কল্প কাহিনীর মতো মনে হবে এই নদীটির বর্তমান হালচাল দেখলে। অন্যদিকে কেশবপুর যশোরের অন্যতম বানিজ্যিক শহর হিসেবে বিখ্যাত ছিলো এই নদীটির কারণে। এই নদী দিয়ে বড় বড় নৌকা ও জাহাজ চলাচল করতো। কেশবপুর শহরটিতে নদীপথে ব্যবসা বানিজ্যের পন্য সামগ্রী আমদানি রপ্তানি হতো। তাছাড়া সুন্দরবনের গোলপাতা ও বনের সুন্দরী ও গরান কাঠ নদীপথে নৌযানে করে কেশবপুর শহরে বিকিকিনি হতো। কিন্তু এই নদীটি এখন মৃত প্রায়। তাই কেশবপুরে নদীতে পথে ব্যবসা-বানিজ্যের সেই কারবার এখন আর নেই। যা সবই এখন অতীত স্মৃতি ও ইতিকথা হয়ে আছে লোকমুখে! সুত্র মতে, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার রোহিতা ইউনিয়ন এলাকায় প্রবাহমান কপোতাক্ষ নদ থেকে হরিহরনদটির উৎপত্তি। বর্তমানে এটির উৎসমুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নদীটি মণিরামপুর উপজেলার কাসিমনগর ইউনিয়নের একটি নি¤œভূমি থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে বলে মনে হয়। এই নদীর জলধারা একই জেলার মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হাপরখালী নদীতে নিপতিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩৬ কিঃমিঃ এবং ১৮ মিটার। এটির প্রকৃতি অনেকটা সর্পিলাকার। বর্তমান সময়ে হরিহরনদটির উৎসভাগ থেকে মণিরামপুর পৌরএলাকা ও খানপুর-শ্যামকূড় ইউনিয়ন এলাকার অংশে বছরের অর্ধেক সময় পানি থাকে না। কোথাও কোথাও নদীটি ক্ষীণ প্রবাহপথে পরিনত হয়েছে। নদীটি এখনও জোঁয়ার-ভাটার প্রভাবে প্রভাবিত। কিন্তু এলাকার কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ অবৈধভাবে মাছ ধরার জন্য পাটা নির্মাণ করায় নদীটির স্বাভাবিক ¯্রােতধারা বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় ক্রমান্বয়ে নদীটি তার নাব্যতা হারিয়ে এখন স্বরুপ বদলে মরা খালে পরিনত হয়েছে। সুত্রে আরও জানা যায়, মণিরামপুর ও কেশবপুর পৌর শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহমান এক সময়ের খর¯্রােতা হরিহরনদের নাব্যতা এবং নদীতে যাতে অবাধে জোয়ার ভাটা চলতে পারে এবং বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ সমভূমি ও বিলের পানি যাতে হরিহরনদী দিয়ে নিষ্কাশন হতে পারে সেই লক্ষ্যে স্থানীয় জনগনের দাবীর প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে নদী খননের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। তৎকালিন সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে হরিহরনদের কেশবপুর উপজেলা অংশের দেড় কিঃিমিঃ খনন কাজ করেন। যা কোন কাজে আসেনি। ব্যাপক অনিয়ম হওয়ায় অজ্ঞাত কারণে প্রকল্পটি সেই বছরই বন্ধ হয়ে যায়। সেই ধরে হরিহরনদীটি খননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড আর কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে নাই। যার ফলে ধীরে ধীরে এই নদীটি নাব্যতা হারিয়ে এখন মরা খালে উপনিত হয়েছে। অতি সম্প্রতি মণিরামপুর পৌর শহরের বিজয়রামপুর-মোহনপুর ব্রীজের কাছে দেখা যায় মৃত নদীটির তলদেশ শুকিয়ে যৎসামান্য পানি রয়েছে নদীতে। নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ার সুবাদে স্থানীয় বেশ কয়েকজন কিশোর নদীর মাঝখানের সামান্য পানিটুকু সেচে কাদা-পানিতে মাছ ধরছে। এমন দৃশ্যটি ক্যামেরায় ধারন করে নিলাম। পাশাপাশি এই নদীটির বেহাল দশা দেখে যারপরনাই মনটা খারাপ হয়ে গেল। ছোট বেলার সেই খর¯্রােতা হরিহরনদের নৌচলাচল ও ¯্রােতের গর্জনের ধ্বনিসহ অতীতের নানান স্মৃতি মনে পড়তে লাগলো। এই নদীটির বর্তমান বেহালদশা নিয়ে মণিরামপুরের বিভিন্ন সুধীজনের সাথে কথা হয়। সবাই নদীটি খনন করে এর নাব্যতা পুনরুদ্ধারের জন্য যথাযথ কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।