04/22/2025 আলোচিত উপজেলা মণিরামপুর চালুয়াহাটি গ্রামে একটি অবিস্ফোরিত বোমার খোঁজ মিলেছে
মণিরামপুর প্রতিনিধি।।
৬ জানুয়ারী ২০২৩ ১৮:৩৮
যশোরের আলোচিত উপজেলা মণিরামপুর চালুয়াহাটি গ্রামে একটি অবিস্ফোরিত বোমার খোঁজ মিলেছে। তবে বোমাটি স্মৃতি হিসেবে রেখে দিতে চায় এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর সূত্রে জানাযায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে একটি অবিস্ফোরিত বোমা রয়েছে মোড়ল বাড়ির গেটের সামনে। বোমাটির ওজন সাড়ে ২৭ মণ। এলাকাবাসীর দাবি, বোমাটি স্মৃতিফলক করে রাখা হোক আর সরকারি ব্যবস্থাপনায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস হিসেবে সংরক্ষণ করা হোক।
একাত্তর সালের ১৫ ডিসেম্বর চালুয়াহাটি গ্রামের ওপর দিয়ে উড়ে যায় পর পর তিনটি যুদ্ধবিমান। তার একটি থেকে এই বোমাটি ফেলা হয়। পরবর্তীতে এক সময় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে বোমাটির ঠাঁই হয় আওয়ামী লীগের নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত ফজলুর রহমানের বাড়ি গেটের সামনে।
সাড়ে ২৭ মণ ওজনের সেই বোমাটি পাকা ইটের পাটাতনের ওপর রেখে রডের বেষ্টনি দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয়রা জানান, সে সময় বোমাটি পড়েছিল চালুয়াহাটি মোড়লপাড়া তাহের ফকির ও রহমতুলা ফকিরের পারিবারিক কবরস্থানে। বাঁশ বাগানের পুরোনো কবরস্থানে পড়ার পর কিছুক্ষণ ঘূর্ণন দিয়ে থেমে যায় এবং আর কখনই বিস্ফোরিত হয়নি। বোমা পড়ার স্থানে বিশালাকার গর্তেরও সৃষ্টি হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এক সময় সেখান থেকে বোমাটি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের বাড়ির সামনে এনে রাখা হয়। পরে তিনি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন।
এলাকার অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসা শিক্ষক গোলাম মাওলানা (৯৫) বলেন, ১৯৭১সালের ১৫ ডিসেম্বর ছিল বৃহস্পতিবার। দুপুর ১টার দিকে বাড়ির পাশের জমিতে কাজ করছিলাম, হঠাৎ পরপর তিনটি প্লেন পূব দিক থেকে উড়ে পশ্চিম দিকে যাওয়া সময় মনে হল একটা ভেঙ্গে-চুরে পড়ে গেল। কোথায় পড়েছে তখনও জানি না, কিছুক্ষণ পরে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় চালুয়াহাটি গ্রামের ফকির পাড়ায় পড়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নিজাম উদ্দিন (৯০) ও মফেজ উদ্দিন মৌলভী বলেন, কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই কবরস্থান কালো ধোঁয়ার ভরে গেল। কিছুক্ষণ পরে সেখানে গিয়ে দেখাগেছে বাঁশের একটি বড় ঝাড় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে উড়ে চলে গেছে। আমরা কয়েকজন অনেক পরে ভয়ে ভয়ে সেখানে যাই। গিয়ে দেখি একটা বিশাল গর্ত, তার মধ্যে পড়ে রয়েছে একটা বড় কালো বস্তু। পরে জেনেছি ওটা একটা বোমা।
তারা আরও জানান, বছরখানেক পর ওই গ্রামের মফেজ উদ্দিন মৌলভী, রাহাত মোড়ল, জালাল মোড়ল ও মোসা মোড়ল বোমাটি কবরস্থান থেকে উদ্ধার করে সাবেক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের বাড়িতে নিয়ে রাখেন। সেই থেকে বোমাটি ওখানেই রয়েছে। বোমাটির গায়ে লেখা আছে ইউএসএস আরথ। বোমাটির ওজন সাড়ে ২৭ মণ।
স্থানীয়রা জানান, বোমা দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় থেকে বহু লোকজন আসেন ওই গ্রামে। তাই গ্রামবাসী বোমাটি সংরক্ষণের জন্যে সরকারি ব্যবস্থাপনার দাবি জানান। তাদের মতে এটি সংরক্ষণ করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পাতায় লেখা হোক। একই সঙ্গে একটা স্মৃতিফলক নির্মাণের মাধ্যমে এটি সংরক্ষিত থাকুক। যশোরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান বলেন, এটা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে দ্রুত।