যশোরের মণিরামপুরে জিএইচ পাড়দীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ শতক জমি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্ত্রী, শ্যালক ও শ্যালিকার নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, নামমাত্র মূল্যে রেজিস্ট্রির পর সেখানে বিশাল একটি বিপনী বিতান (মার্কেট) নির্মাণ করছেন সভাপতি কামরুজ্জামান। আর এ জমি রেজিস্ট্রি করে দেন প্রধান শিক্ষক আবদুল গফুর। বিষয়টি জানাজানি হলে অভিভাবক, শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে স্বশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখা দেয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছেন। অভিযোগে জানা যায়, মণিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের পাড়দীয়া বাজারের পাশে অবস্থিত জিএইচ পাড়দীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। সরকার গতবছর প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ে চারতলা ভবন নির্মাণ করে। পাশে বাজারে বিদ্যালয়ের নামে ২০ শতক জমি রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ওই জমির ওপর নজর পড়ে ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি এলাকার প্রভাবশালী মাদ্রাসা শিক্ষক কামরুজ্জামানের। সম্প্রতি ম্যানেজিং কিমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যোগসাজসে একটি রেজুলেশন করেন ওই জমির ১০ শতক বিক্রির জন্য। অভিযোগ রয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অথবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোন অনুমতি না নিয়েই ১০ শতক জমি নামমাত্র মূল্যে প্রধান শিক্ষক আবদুল গফুর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ধলিগাতী আলিম মাদ্রাসার প্রভাষক কামরুজ্জামানের স্ত্রী সহকারী শিক্ষক হোসনেয়ারা খাতুন বেবি, শ্যালক শরিফুল ইসলাম বিল্লাল ও শ্যালিকা সেলিনা খাতুনের নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। ইতিমধ্যে সেই জমির ওপর বিপনীবিতানের জন্য পাকা ভবন নির্মাণ শুরু করেছেন সভাপতি কামরুজ্জামান। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। শনিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে কথা হয় স্কুলের অভিভাবক সদস্য নজরুল ইসলাম ও সাবেক সভাপতি ইলিয়াস উদ্দিনের সাথে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে সভাপতি হয়ে কামরুজ্জামান স্কুলের ১০ শতক জমি স্ত্রী, শ্যালিকা ও শ্যালকের নামে লিখে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, রেজিস্ট্রির পর সেখানে সভাপতি বিশাল মার্কেট নির্মান শুরু করেছেন। ইউপি সদস্য সবুজ হোসেন জানান, স্কুলের জমি লিখে নেওয়ার ঘটনা তিনি এর আগে কোনদিন শোনেননি। অপর অভিভাবক ইউনুচ আলী জানান, নামমাত্র মূল্যে জমি লিখে নিলেও একটি টাকাও সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক স্কুলের ফান্ডে জমা দেননি। প্রধান শিক্ষক জানান, ওই জমি বিক্রির প্রয়োজন ছিল। ফলে ম্যানেজিং কমিটির সম্মতিতে বিক্রি করা হয়েছে। তবে টাকার হিসেব তিনি জানেন না। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাদ্রাসা শিক্ষক কামরুজ্জামান জানান, ওই জমি বিক্রি করে পাশে স্কুলের নামে আর একটি জমি কেনা হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার স্কুলের জমি বিক্রির অভিযোগ পেয়ে অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ম্যানেজিং কমিটি ইচ্ছা করলেই প্রতিষ্ঠানের জমি বিক্রি করতে পারে না। বিক্রি করতে হলে অবশ্যই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর অথবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কবীর হোসেন জানান, অভিযোগ পেয়ে ইতিমধ্যে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে আগামী ২৩ নভেম্বর স্বশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখার জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। ব্যাখ্যার পর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।