04/20/2025 সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম হতে পারে শুদ্ধি ছাত্ররাজনীতির সহায়ক
বিশেষ প্রতিনিধি।।
১৮ আগস্ট ২০২২ ০৮:৩১
ছাত্ররাজনীতি হলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নিয়োজিত, অধিকার আদায়ে সোচ্চার, ইতিবাচক সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত, ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে থেকে সর্বদা হীনস্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী, শিক্ষাঙ্গনে দূর্নীতি অনিয়ম প্রতিরোধে অকুতোভয়, ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য নীতিবান আর ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সৃষ্টির বাতিঘর বা কারখানা।
সুশীল সমাজ বলে থাকেন বর্তমান ছাত্ররাজনীতি কলুষিত। তবে বাস্তবতা ভিন্ন, কেননা স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ের ছাত্ররাজনীতি ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের ছাত্ররাজনীতি কখনো একই ধাঁচে চলতে পারে না। অবশ্যই সেখানে পার্থক্য বিদ্যমান থাকবে এবং আছে। তবে শুধুমাত্র ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে ছাত্ররাজনীতিতে আগমনের দরুন সৃষ্ট ব্যত্যয় এর কারণটা একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না। তাছাড়া নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয়, নানাবিধ অরাজকতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী; এটাও যেমন সঠিক। তেমনি চলমান ছাত্ররাজনীতিতে দৃশ্যত সকল অশুভ ধারা সুশীল সমাজের কিছু সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্রের দৃষ্টান্ত স্বরূপ, এটাও যুক্তিযুক্ত।
আর তাই ষড়যন্ত্র থেকে সমস্যা, সমস্যা থেকে সংকটে পরিণত হওয়ার পূর্বেই ষড়যন্ত্রের গলাটি চেপে সমস্যা সৃষ্টির গতিপথ রোধ করাটাই শ্রেষ্ঠ সমাধান হিসাবে সর্বজন স্বীকৃত হবে বলে আশা রাখি। আমরা জানি, একজন ছাত্র রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সমাজ গঠনের কারিগর। আর সেজন্য একটা সমাজ কিভাবে পরিবাহিত হয়, পরিচালিত হয় সে সম্পর্কে সমুদয় জ্ঞান রাখাটা তার জন্য আবশ্যক। ইতিহাস তাকে জানতে হবে, বিজ্ঞান তাকে আত্মস্থ করতে হবে, দর্শন তাকে ধারণ করতে হবে, অর্থনীতিটা ভালোভাবে বুঝতে হবে। আর তাই এই বিষয়গুলোর উপর জ্ঞান আহরণের স্বার্থে প্রচুর বই-পত্র তাকে পড়তে হবে। পাশাপাশি দেশ ও বিশ্বের সম্পর্কে সামসময়িক ধারণা রাখতে নিয়মিত পেপার-পত্রিকা তার পড়া উচিৎ। রাজনীতি এমনি এক জায়গা, যেখানে প্রতিনিয়ত সবকিছু নতুন করে শিখতে হয়। সেজন্য শেখার প্রবণতা এখানে অতীব অপরিহার্য বিষয়।
পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে তথা ছাত্র সমাজের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস প্রচার, প্রকৃত মুজিব আদর্শের বিকাশ সাধন এবং জ্ঞান নির্ভর শুদ্ধি ছাত্ররাজনীতির পরিবেশ গড়ে তুলতে সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করি।
প্রশ্ন থাকতে পারে, সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম কি ?
সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম বলতে সাধারণত পুঁথিগত বিষয়ের বাইরের জ্ঞানার্জনকে বুঝায়। সহশিক্ষা মূলক কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত উন্নয়নমূলক কার্যক্রম যা স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার সাধারণ পাঠ্যক্রমের অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো স্বেচ্ছাসেবাভিত্তিক, সামাজিক জনহিতকর এবং সমবয়সী শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। এ শিক্ষা একঘেয়েমি ও অবসন্নতা দূর করে জ্ঞানার্জন ও সৃজনশীলতা বিকাশে পূর্ণ সহযোগিতা করে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল্যবোধ উজ্জীবিত করে। অধিকন্তু প্রতিষ্ঠানের সহশিক্ষা মূলক কার্যাবলীতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে দেশ ও সমাজ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এর মাধ্যমে তরুণ ছেলেমেয়েরা বাস্তব জীবনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে পরিচিত হয় এবং পারস্পরিক সহযোগিতা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মনোভাব গড়ে ওঠে। সর্বোপরি বলা যেতে পারে, সহশিক্ষা মূলক কার্যাবলীর মাধ্যমে শৃঙ্খলাবোধ জাগরিত হয়, সকলের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয় এবং তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অবসর সময়কে কাজে লাগানোর অভ্যাস গড়ে ওঠে।
স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিদের সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহতকরণে যশোর জেলার ছাত্রসমাজের মাঝে প্রকৃত মুজিব আদর্শ বিকাশ সাধন এবং জ্ঞান নির্ভর শুদ্ধি ছাত্ররাজনীতির পরিবেশ গড়ে তুলতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের উদ্যোগে নানাবিধ সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম চালুকরণ এখন সময়ের দাবি বললে ভুল হবে না।
ছাত্রলীগের উদ্যোগে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথা স্কুল- কলেজগুলোতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেন্দ্রিক কুইজ প্রতিযোগিতা, প্রবন্ধ রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, ৭ মার্চের ভাষণ প্রতিযোগিতা, গল্প লেখা প্রতিযোগিতা, কবিতা লেখা প্রতিযোগিতা, আবৃত্তি প্রতিযোগিতার মতো যুগান্তকারী কার্যক্রমগুলোর আয়োজন করা যেতে পারে। এসকল প্রতিযোগিতায় উপহার সামগ্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর লেখা "বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী", "কারাগারের রোজনামচা", "আমার দেখা নয়া চীন" এর মত বইগুলো বিতরণ করলে, মুজিব আদর্শ বিকাশে সহায়ক হিসাবে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস রাখি।
আর এই পুরো কার্যক্রম বাস্তবায়নে যশোর জেলা ছাত্রলীগের একটি শক্তিশালী "শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সেল" গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। সেলক্ষ্যে যশোর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্নাঙ্গ গঠন পরবর্তী সময়ে শক্তিশালী শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সেল গঠনে যশোর জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ভেবে দেখবেন বলে প্রত্যাশা রাখি।
যশোরের ছাত্র সমাজের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস প্রচার, প্রকৃত মুজিব আদর্শের বিকাশ সাধন এবং জ্ঞান নির্ভর একটি শুদ্ধি ছাত্ররাজনীতির পরিবেশ গড়ে তুলতে সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমগুলো যশোর জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে যশোরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চালুকরণের জন্য যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিকট জোর দাবি রাখছি।
পরিশেষে এটাই বলবো, তারুণ্যের চিন্তাধারার ঐক্যের মাধ্যমে এবং মেধাভিত্তিক, সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল ইতিবাচক কাজ গুলোর মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলার বাস্তবায়ন ঘটুক। সর্বদা চারিদিক স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হোক জয় বাংলার ধ্বনিতে। আর মুজিব আদর্শ ছড়িয়ে পড়ুক সারাবাংলায় সর্বত্র, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মতরে।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখকঃ
মোঃ রিয়াজ উদ্দীন রেজা।
কর্মী, যশোর জেলা ছাত্রলীগ।