04/21/2025 ভাঙনের কবলে মধুমতি নদীর অসহয় জনগণ
রাশেদ রেজা, মাগুরা প্রতিনিধিঃ
১৩ আগস্ট ২০২২ ১৬:২৪
মাগুরার মহাম্মাদপুর উপজেলার মধুমতি নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় আতংঙ্কে দিন পার করছে নদী পাড়ের জনগণ। উপজেলার গোপালনগর, মহেষপুর, হরেকৃষ্ণপুর, ঝামা, আড়মাঝি, যশোবন্তপুর, চরপাচুড়িয়া, রায়পুর, মুরাইল, ধুপুড়িয়া, জাঙ্গালিয়া, রুইজানি, কাশিপুর, ধুলজুড়ি, দ্বিগমাঝি, দেউলি ও ভোলানাথপুর গ্রামগুলোর হাজার মানুষ ভাঙনের ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
গত জুলাই মাসের ২২ তারিখ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) জনাব মিজানুর রহমান ভাঙন অধুষিত এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন।
আল্প কিছুদিনের মধ্যে মধুমতি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিনিয়ত ভাঙনের কারণে নদীর পাড় মধুমতির পেটে বিলীন হচ্ছে যাচ্ছে। হুমকির মুখে পড়ছে বসতভিটা, গাছপালা ও শতশত একর আবাদিজমি।
ভাঙন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেকে ঘর ও মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন, নদীপাড়ে থাকা গাছপালা দ্রুত কাটছেন, ভাঙনের সাথে পাল্লা দিয়ে দ্রুত বসতবাড়ি সহ প্রয়োজনীয় মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে, আরো দেখা যায় নদী ভাঙনে স্বর্বস্ব হারানো অসহায় নারী-পুরুষের আহাজারি। নিজেদের সম্পদ হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে দেখা গেছে অনেককে। চারিদিকে শুধু ভাঙনের আতঙ্ক।
উপজেলা সদরের গোপাল নগর গ্রামের হাসান কাজীর স্ত্রী অসহায়া রেহেনা বেগম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, গত কয়েক বছরের মধ্যে ৫/৬ বার বসতভিটা সরিয়েছি, আমরা সাধারণ কৃষক পরিবার, এবারের ভাঙনেও রাক্ষুসী মধুমতি আমাদের বসতবাড়ি ও গাছপালা শেষ করে দিয়েছে, আমরা এখন কোথায় যাবো।
এমন কোথায় যাবার লোক এখন মধুমতি পাড়ে শতশত, এখনি সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে জমিজমা ও বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হবে অনেকে। অসহায় অবস্থায় অনেকেই আশ্রয় নিবে খোলা আকাশের নিচে।
মহাম্মাদপুর উপজেলার উত্তরে চর-সেলামতপুর থেকে শুরু করে দক্ষিণে কালি শংকরপুর পর্যন্ত মধুমতির ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, ভাঙনের মুখে রয়েছে মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা, ঈদগাহ, স্কুল, বাজার, অসংখ্য দোকান-পাটসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি। নদীপাড়ের শতশত পরিবারের ভূমিহীন হবার আগে এখনি নিতে হবে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের কাজ দাবি ভূক্তভোগি মধুমতি পাড়ের জনগণের।
স্থানীয় মেম্বার মো. মুরাদ হোসেন সংবাদ কর্মীদের জানান, আমি এই এলাকার সামান্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি (মেম্বর) আমার দাবি গ্রামের দিনমুজুর হাসান কাজীর বসতবাড়ীসহ গাছপালা যেমন নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে, এমনটি আর মানুষ হিসাবে দেখা যায় না, এই এলাকার আরো অনেক বসতভিটা ঝুঁকিতে রয়েছে, তাই কতৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি নদী শাসনে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য।
গোপালনগর গ্রামের বাসিন্দা ধোয়াইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গোপালনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেক বসতবাড়ী ও ফসলি জমি মধুমতি নদী ভাঙনের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে, আমার নিজের বসতবাড়ীরও রয়েছে ঝুঁকিতে। একটা পরিবার পাঁচ থেকে সাতবার বাড়ী সরিয়ে নিঃশ্ব হয়ে পড়েছে। তাই নদীপাড়ের অসহায় পরিবারের কথা ভেবে ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করতে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অঃ দাঃ) জি এম রাইসুল ইসলাম জানান, মধুমতি নদী ভাঙন কবলিত এলাকা কিছুদিন আগে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক স্যার পরিদর্শন করেছে এবং আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। খুব দ্রুত ভাঙন কবলিত এলাকায় গত বছরের ন্যায় জিও ব্যাগ ফেলা হবে।
মাগুরা-২ আসনের সাংসদ ড. শ্রী বীরেন শিকদার সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ইতিপূর্বে হরেকৃষ্ণপুর থেকে ঝামা প্রর্যন্ত ৩০০ মিটার এলকায় জিও ব্যাগ ফেলা এবং কাশিপুর এলাকায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০ মিটার বাধ নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। গত ২২ জুলাই আমরা নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শণ করেছি। তবে আমি চেষ্টা করছি ভাঙন প্রবল এলাকাগুলো চিহ্নিত করে স্থায়ী বাঁধ দেয়ার জন্য।