04/20/2025 মণিরামপুরে ছাত্রী'কে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাল্য বিয়ে: ঘটকালি করলেন প্রধান শিক্ষক
মণিরামপুর প্রতিনিধি।।
৭ জুন ২০২২ ০৪:৪০
যশোরের মণিরামপুর জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুস সামাদ (৩২) নিজ প্রতিষ্ঠানের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী আসমা খাতুন'কে (১৪) গত ২২শে মে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ফুসলিয়ে বিয়ে করেছেন বলে জানাযায়। এমন অভিযোগে সোশাল মিডিয়ার জুড়ে তোলপাড়। সরেজমিনে তদন্তে গেলে গত এক সপ্তাহ আগে তিনি এই বিয়ে করেছেন বলে জানাযায়। গত কয়েক দিন থেকে বিষয়টি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে ওই শিক্ষক'কে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সোশাল মিডিয়া ফেসবুকের সূত্র ধরে বিশেষ এক অনুসন্ধানে জানাযায় অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুস সামাদ উপজেলার জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ের শিক্ষক উপজেলার ঢাকুরিয়া গ্রামের শতকত আলীর ছেলে।
সদ্য বিবাহিত ছাত্রীকে গত ২২শে মে যশোরে নিয়ে গিয়ে গোপনে বিয়ে করেন শিক্ষক আব্দুস সামাদ। বাল্য বিয়ের শিকার এই ছাত্রী জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমানত হোসেনের ভাগ্নি। আমানত হোসেন নিজে দায়িত্ব নিয়ে আব্দুস সামাদের সঙ্গে ভাগ্নির বিয়ে দিয়েছেন। এরপর থেকে নিয়মিত স্বামীর বাড়ি আসা যাওয়া করছে ছাত্রী।
এদিকে,২-৩ দিন পরে শিক্ষক-ছাত্রীর বিয়ের ঘটনাটি প্রকাশ পায়। এরপর থেকে বিদ্যালয় এলাকায় হইচই পড়ে যায়। অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুস সামাদ ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রধান শিক্ষক আমানত হোসেনের শাস্তি দাবি করছেন এলাকাবাসীরা। তবে, নিজের বিয়ের কথা অস্বীকার করেছে ওই ছাত্রী। কিন্তু বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরা বিয়ের ঘটনা স্বীকার করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যলয়ের আরও কয়েক জন শিক্ষার্থী বলেন এই শিক্ষক আরও দুই জন মেয়ে কে প্রেমের ফাঁদে ফেলে দীর্ঘ তিন বছর প্রেমের সম্পর্ক চালিয়েছেন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অথচ তাদের কে বিয়ে করেননি। তারা আরও বলেন আসমা খাতুন আমাদের প্রধান শিক্ষক আমানত আলীর আপন ভাগ্নি, তিনি নিজে ঘটকালি করেন এই বিয়েতে।
মেয়ের বাবা মোঃ হজরত ফকির বলেন আমি আমার মেয়েকে পারিবারিক মতামতেই বিয়ে দিয়েছি তবে আমার মেয়ের বয়স কম বিধায় আমরা লোকজন জানাজানি করিনি।
জালালপুর গ্রামের মুর্শিদ হাসান ইমন নামে একজন বলেন, যেখানে শিক্ষকদের উচিত বাল্য বিয়ে বন্ধ করা, সেখানে শিক্ষক নিজেই এমন কাজ করেছেন। তাও আবার নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীকে প্রধান শিক্ষকের সহায়তায় বিয়ে করেছেন। বিষয়টি ঘৃণিত। এর প্রভাব অন্য ছাত্রীদের ওপর পড়বে। আমরা এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই।
বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিবাহিত শিক্ষক আব্দুস সামাদ এর মোবাইল ফোনে কল করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। ফলে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ঘটকালির বিষয়টি অস্বীকার করে জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমানত হোসেন বলেন, শিক্ষক আব্দুস সামাদ আমার প্রতিষ্ঠানের ৮ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন এমন খবর লোকমুখে শুনছি। ওই ছাত্রী আমার ভাগ্নি হলেও তার পরিবার বিয়ের বিষয়ে আমাকে কিছু জানায়নি। আমি বিয়েতে ছিলামও না।
খেদাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম জিন্নাহ বলেন, ঘটনাটি জানার পর বিদ্যালয়ে ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় গ্রাম-পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনা সত্য হলে ওই শিক্ষককে ধরে পুলিশে সোপর্দ করা হবে।
মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, জালালপুর বিদ্যালয়ের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। ওই শিক্ষক পলাতক রয়েছেন। তাঁর বেতন বন্ধসহ বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রধান শিক্ষকের বিষয়েও তথ্য নেওয়া হচ্ছে। তিনি জড়িত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।