04/20/2025 মৌলবাদের আস্ফালন, সাংস্কৃতিক সচেতনতা এবং ছাত্রলীগ
রিয়াজ উদ্দীন রেজা।।
১৮ মে ২০২২ ২২:১২
সুশীল সমাজ বলে থাকেন বর্তমান ছাত্ররাজনীতি কলুষিত। তবে বাস্তবতা ভিন্ন, কেননা স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ের ছাত্ররাজনীতি ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের ছাত্ররাজনীতি কখনো একই ধাঁচে চলতে পারে না। অবশ্যই সেখানে পার্থক্য বিদ্যমান থাকবে এবং আছে। আমরা জানি, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে ছাত্ররা মাতৃভাষার জন্য লড়াই করেছে , দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে। বলা চলে, স্বাধীনতা পর্যন্ত ছাত্র রাজনীতি ছিল সামাজিক, সাংস্কৃতিক, গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের৷ অন্যদিকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ছাত্রসমাজ লড়াই করেছে স্বাধীকার আদায়ের সংগ্রামের নিমিত্তে।
চলমান রাজনীতিতে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অপশক্তির অপকৌশলের দরুণ সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফালন আমরা দেখতে পাই। একই ধরনের, একই ছাঁচের ঘটনাগুলোর বারংবার পুনরাবৃত্তি কোন আকস্মিক ঘটনা নয় এটা যেমন সত্যি, তেমনি এই সংকট নিরসনে স্থায়ী সমাধান জরুরী।
বাঙালি জাতি হিসাবে আমাদের নিজস্বতা স্বরূপ নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। বাংলাদেশের বাঙালি সংস্কৃতি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের কারণেই স্বমহিমায় উজ্জ্বল্যমান। কালের বিবর্তনের দরুণ শতাব্দীর পর শতাব্দী চলমান বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ইসলাম ধর্ম, হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম এবং খ্রিস্টান ধর্মের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এটি প্রকাশিত হয় সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক সহ বিভিন্ন রূপে। শিল্প নৈপুণ্য, লোককাহিনী, লোককথা, লোকগীতি, ভাষা-সাহিত্য, দর্শন, ধর্ম, উৎসব উদযাপন, স্বতন্ত্র রন্ধনশৈলী এসবই আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্য।
এটা সত্য যে, ছাত্রলীগ একমাত্র সংগঠন যে সংগঠনটি স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে ছাত্রদের সংগঠিত করার মাধ্যমে ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর ৬ দফা ও ১১ দফা, ৬৯ এর গন অভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্বাধীকার আদায়ে সোচ্চার থেকেছে এবং অধিকার আদায়ে সফল হয়েছে। এটাও স্বীকার্য সত্য, দেশ ও জাতির যেকোন সংকটে ছাত্রলীগ সবার এগিয়ে এসেছে। ঢাল হয়ে রক্ষা করেছে দেশকে। বর্তমান সময়ে দেশকে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির আস্ফালন থেকে রক্ষা করতে ছাত্রলীগের অবশ্যই দায়বদ্ধতা রয়েছে বলে মনে করি। সেলক্ষ্যে "ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সেল" কর্তৃক কার্যকরী কিছু পদক্ষেপ নিলে আশু সমস্যার সমাধান সম্ভবপর হবে বলে বিশ্বাস করি। যেমন ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সেল কর্তৃক প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক, লোকগীতি, ভাষা-সাহিত্য সহ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতার আয়োজন। যার মাধ্যমে অনাগত প্রজন্ম উদ্বুদ্ধ হবে বাঙালি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার জন্য। এছাড়াও ছাত্রলীগের "মাতৃভূমি সাংস্কৃতিক সংসদ" এর প্রতিটি স্কুল পর্যায় পর্যন্ত কমিটি গঠন কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে। মাতৃভূমি সাংস্কৃতিক সংসদ এর কাজ হবে প্রতিটি স্কুল, কলেজে শিক্ষার্থীদের মাঝে সাংস্কৃতিক চেতনা বৃদ্ধি করা, শিক্ষার্থীদের মাঝে বাঙালি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ সৃষ্টি করা। আর এসবের মাধ্যমেই সৃষ্টি হবে সাংস্কৃতিক সচেতন ছাত্রসমাজ। আর আজকের শিক্ষার্থী যেহেতু আগামীদিনের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। সেহেতু সাংস্কৃতিক সচেতনতা সম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে উঠলে সাম্প্রদায়িক চেতনাধারী মৌলবাদীদের আস্ফালন রোধে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে বলে বিশ্বাস রাখি।
প্রত্যাশা করি, ছাত্রলীগের হাত দিয়েই ইতিহাসের উজ্জীবনের মাধ্যমে, সাংস্কৃতিক সচেতনতা তথা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে মৌলবাদীদের বিষবাষ্প ছড়ানোর সকল ধারা রুদ্ধ হবে। সাংস্কৃতিক জ্ঞান নির্ভর, মেধাভিত্তিক এবং মুজিব আদর্শিক একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে- দেশের উন্নয়ন সাধনে, ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের নিমিত্তে অনাগত প্রজন্ম কাজ করে যাবে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে আরো অধিক উচ্চতর স্থানে।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখকঃ
রিয়াজ উদ্দীন রেজা
কর্মী, যশোর জেলা ছাত্রলীগ।