04/20/2025 মণিরামপুরে হরিদাসকাটি ইউনিয়নে ১০ টাকার চাউল বিতারন বন্ধ
মণিরামপুরে হরিদাসকাটি ইউনিয়নে ১০ টাকার চাউল বিতারন বন্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৯ মার্চ ২০২২ ১২:৪৫
মণিরামপুর প্রতিনিধিঃ যশোরের মণিরামপুরে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির (১০ টাকার) মার্চ মাসের চাল পাননি হরিদাসকাটি ইউনিয়নের উপকারভোগীরা। তালিকা সংশোধনের নামে ১ হাজার ৬৫ জনের চাল পরিবেশকদের গুদামে আটকে রাখা হয়েছে। কবে এ চাল বিতরণ করা হবে সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অনুমতি নিয়ে গত বুধবার (২৩ মার্চ) ওই ইউনিয়নের দুইজন পরিবেশক চাল বিতরণ করতে গিয়ে মেম্বর চেয়ারম্যানের বাধার মুখে পড়ে বিতরণ বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর রবিবার (২৭ মার্চ) একই অবস্থার মুখে পড়েন অপর এক পরিবেশক। ফলে চাল নিতে এসে ফিরে গেছেন ৫-৬শ উপকারভোগী। চাল না পেয়ে বিপাকে আছেন জলাবদ্ধ এ ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দফতর সূত্রে জানা গেছে, হরিদাসকাটি ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১ হাজার ৩৩৬ জন উপকারভোগী রয়েছেন। যারা ২০১৬ সাল থেকে ৩০০ টাকা মূল্যে মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে বছরে ৫ বার ৩০ কেজি করে চাল পেয়ে আসছেন। গেলো বছর খাদ্য অধিদফতরের নির্দেশনায় ও খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পরামর্শে সাবেক চেয়ারম্যান বিপদ ভঞ্জন পাড়ে ৫৮ টি কার্ড বাতিল করে নতুনদের তালিকায় যুক্ত করেন। নতুন তালিকাভুক্তরা গেলো বছরের অক্টোবর ও নভেম্বরের চাল পেয়েছেন।
এদিকে নভেম্বরের নির্বাচনে ওই ইউনিয়নে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আলমগীর কবির লিটন। চলতি মাসে তিনি ৪৪৫ জনকে বাদ দিয়ে নতুন নাম প্রস্তাব করেছেন। সে তালিকা যাচাই বাছাই করে কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত চাল বিতরণ বন্ধ থাকবে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, হরিদাসকাটি ইউনিয়নটি জলাবদ্ধ এলাকা। ভবদহের জলাবদ্ধতার কারণে এখানকার মাঠঘাটে পানি জমে থাকায় অধিকাংশ গ্রামে ধান চাষ হয় না ১০ টাকার চালে এ অঞ্চলের মানুষের অনেক উপকার হচ্ছিলো। তালিকা সংশোধনের নামে এত লোকের চাল আটকে রাখা ঠিক হয়নি। যাদের নাম বাদ দিয়ে নতুন ৪৪৫ জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো বাদ রেখে বাকি লোকের চাল দেয়ার দাবি তাদের।
হরিদাসকাটি ইউনিয়নের কুচলিয়া গ্রামের উপকারভোগী করুনা বিশ্বাস আজ সোমবার বলেন, এ মাসের চাল দেয়নি। পানিতে তলিয়ে থাকায় আমাদের গ্রামে ধান চাষ হয় না।
কবিতা আক্ষেপ করে বলেন, কি বলবো আর, সকালে এ চাল আনলি রাত্রি রান্না করে খাওয়া লাগে।
নেবুগাতী গ্রামের ভদ্রকান্ত বলেন, চাষবাসতো হয়না! চা বেচে চলে ৫ জনের সংসার। ১০ টাকার চালের কার্ডে ভালই উপকার হচ্ছিলো। এ মাসের চাল দেলে না।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পরিবেশক সবুজ হোসেন বলেন, রবিবারে (২৭ মার্চ) চাল দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম। ২০০-২৫০ জন লোক এসেছিলো। ফুড অফিসার জানতে পেরে বললেন বিতরণ বন্ধ রাখতে।
পরিবেশক শাহিন হোসেন বলেন, ইউএনও’র অনুমতি নিয়ে বুধবার (২৩ মার্চ) চাল দিচ্ছিলাম। ১৪ জনকে দেয়ার পর এক মেম্বর এসে বললেন বিতরণ বন্ধ রাখতে। পরে লোকজন ফিরে গেছে।
পরিবেশক মানিক হোসেন বলেন, গত মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) রাতে খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফোন করে চাল বিতরণের জন্য বলেছেন। লোকজন খবর দিয়ে বুধবারে চাল বিক্রি করছিলাম। ৫৭ জনকে দেয়ার পর চেয়ারম্যান বললেন বন্ধ রাখতে। তালিকা সংশোধন না করা পর্যন্ত বিতরণ বন্ধ রাখতে বলেছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রোজিৎ সাহা বলেন, হরিদাসকাটির বর্তমান চেয়ারম্যান এক সপ্তাহ আগে ৪৪৫টি কার্ড সংশোধনের জন্য তালিকা জমা দিয়েছে। যা তদন্ত করে চুড়ান্ত করা হবে।
চাল আটকে গরিব মানুষগুলোকে কষ্ট দিয়ে লাভ কি। এজন্য ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলে আমি চাল দিতে পরিবেশকদের বলে দিয়েছি। তখন চেয়ারম্যান এসে বিতরণ বন্ধ রাখতে বলেন।
ইন্দ্রোজিৎ সাহা বলেন, চেয়ারম্যান বাধা দেয়ার পর ইউএনও আমাকে বলেছেন চাল বন্ধ রাখতে। সব কার্ড সংগ্রহ করে তালিকা বাছাই না করা পর্যন্ত চাল বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে।
হরিদাসকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর কবির লিটন বলেন, পরিবেশকরা নতুন কার্ড করার নামে গরিব অসহায় মানুষদের কাছ থেকে টাকা খেয়েছেন। তাছাড়া অনেকে এ চাল নিয়ে ঘেরে মাছেরে খাওয়ায়। যাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে তাদের থেকে গরিব লোক দেখে নতুন নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসানের ফোন নম্বরে কল করলে ফোন একধিকবার বিজি দেখায়।