04/20/2025 শতাধিক আসনে পরিবর্তন আনবে আওয়ামী লীগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ মার্চ ২০২২ ১০:০০
নিউজ ডেস্ক, ঢাকা।। আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জাতীয় কাউন্সিল করতে চায় চলতি বছরেই। পাশাপাশি সারা দেশেই যারা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তাদের অবস্থা কি তা যাচাই করা হচ্ছে এবং আগামী নির্বাচনে কৌশল নির্ধারণেরও কাজ চলছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ মনে করছে আগামী নির্বাচন হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই নির্বাচন এতো সহজ হবে না। কারণ, নির্বাচনের আগে নানা রকম ষড়যন্ত্র হবে এবং আন্তর্জাতিক মহলের একটি চাপ থাকবে অবাধ সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য।
তাছাড়া বিগত নির্বাচনগুলোতে যেভাবে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা আওয়ামী লগি পেয়েছিল সেটি এবারের নির্বাচনে না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সার্বিক বিবেচনায় আগামী নির্বাচনকে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবেই মনে করছে ক্ষমতাসীন দলটি। আর এই কারণে নির্বাচনের কৌশল হিসেবে ব্যাপক প্রার্থিতার পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যারা বিতর্কিত, যারা এলাকায় কাজ করতে পারেননি, এরকম অজনপ্রিয় ব্যক্তিদেরকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলেছে, বয়সের কারণে এবং নানা বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের বেশকিছু প্রার্থী আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না, এটি মোটামুটি নিশ্চিত। ফরিদপুরের অন্তত দুটি আসন থেকে বেগম সাজেদা চৌধুরী এবং ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন আগামী নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নাম নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সে বিবেচনায় তিনি মনোনয়ন পাবেন না বলেই অনেকে মনে করছেন। এছাড়াও বেশকিছু হেভিওয়েট নেতা আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। আওয়ামী লীগের এক নেতা বলছেন যে, নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ অনেকটাই পশ্চিমবাংলা তৃণমূলের ফর্মুলাটা অনুসরণ করতে চায়। তৃণমূল এইবারের নির্বাচনে ব্যাপক প্রার্থিতায় পরিবর্তন এনেছিল। এমনকি অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীকে বসিয়ে রেখে তৃণমূল একটা নতুনত্বের আবহ তৈরি করার চেষ্টা করেছিল, যেন মানুষ দলের ভিতর পরিবর্তনের ছোঁয়া পায়। সেরকম একটি পরিকল্পনার দিকে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, শতাধিক বা তার বেশি আসনের প্রার্থিতার পরিবর্তন হবে। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে, বিগত দুটি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। ফলে প্রার্থীরা তেমন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে। আর সে কারণেই প্রার্থী বাছাই অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ।
বিভিন্ন কারণে যারা বিতর্কিত হয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে নানারকম অভিযোগ এসেছে তাদেরকে এবার যে প্রার্থিতা দেওয়া হবে না, তা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন, প্রার্থিতা পরিবর্তন নির্ভর করবে জনপ্রিয়তার ওপর। যেসব প্রার্থী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর জনসম্পৃক্ত থাকেননি, জনগণের কাছে যাননি এবং তাদের এলাকার গ্রহণযোগ্যতা কমে গেছে তাদেরকে প্রার্থী থেকে বাদ দেওয়া হবে। একইভাবে ওই সাংগঠনিক সম্পাদক মনে করেন যে, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যারা জড়িয়ে পড়ছেন, সেই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার জন্য কাউকে কাউকে বাদ দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে যে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় যারা দলের বিরোধিতা করেছিল, সেই সমস্ত এমপিদেরকেও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া নাও হতে পারে।
তবে শেষ পর্যন্ত আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কতটা পরিবর্তন করবে, তা নির্ভর করবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের অবস্থার ওপর। নির্বাচনে বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কৌশলের ওপর নির্ভর করবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, এখন থেকেই নির্বাচনী আসনগুলোতে প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। এ কাজটি করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।